শীতের পত্র
লুৎফুন্নাহার মাহমুদ ঐশ্বর্য
শীত পাঠাল কুয়াশার বর্ণমালায় এক পত্র,
পত্র জুড়ে লেখা প্রকৃতির হৃদয় গাথা কাব্য।।
শৈত্য প্রবাহ এসে পত্র উড়িয়ে নিলো পথে,
এক বৃদ্ধা সেথা গুটিয়ে বসে আছে।
পত্র পড়ে নয়ন তলে-
এক ফোঁটা জল তার চিবুক ছুয়েছে।
পত্রের উত্তরে বৃদ্ধা তার হৃদয় ব্যাথা লেখে-
“জীবন বড় কঠিন পথের পারে,
শীতে যেন তা কঠিনতর লাগে।।
একটা মাত্র ছেড়া চাদর মুরে বিশাল এ রাত কাটে,
একবার শীতে এটা ত্রাণে এসেছে,
এবার নাকি মানুষ বড় অভাবে,
কার দুয়ারে গিয়ে হাত পাতি তবে!
কুয়াশায় পথ না দেখে গভীর রাতে,
কত গাড়ি মাত্র আধা ফুট দূরে এসে হটাৎ থেমেছে।
মৃত্যুর মুখ থেকে পুনঃ পুনঃ জীবন ফিরে এসেছে।
এ তনুর ফাটল যেন মাটির ফাটল হারমানাবে।
যারা বদন ঢেকেছে বাহারি উলে,
বাহারি প্রসাধনীতে ঘর ভরেছে,
শীতে ভালো ঘুমোতে পারে!
খনে খনে উষ্ণ পানিয় পিয়ে,
কুয়াশা উপভোগ করে,
তাদের কাছে এ ঘোলাটে শহর বড় প্রিয় লাগে।
পথের পারে পিঠে পুলি বেঁচে,
দু পয়সা হাতে এসেছিল গতশীতে,
এবার সে আশাও বৃথে।।
মাস্ক পরা মানুষ চলার পথে-
পিঠেপুলি খাবে না জীবনের ভয়ে।”
নয়ন জলে ভেজা বর্ণমালাতে,
বৃদ্ধা পত্র জুড়ে ব্যাথাকাব্য লেখে।।
পত্র পড়ে শীত স্তব্ধ হয়ে থাকে,
মানব প্রকৃতি তার বড় বিচিত্র লাগে!
বোধ আসে না যে বিলাসী মানবের অনুভবে,
পথে বসা ঐ বৃদ্ধার দেহ বুঝি জমে জমে!
অতঃপর শীত স্তব্ধতার বর্ণমালায় নতুন পত্র লেখে,
পত্র জুড়ে দু’টি বাক্যই পুনরাবৃত্তি করে-
“মানব (ধনীর) সম্পদে মানবের (গরিবের) অংশ আছে।।
আলনায় সাজানো হরেক রঙা পশমি কাপড়ে,
ঐ অসহায় পথিকেরও হক আছে।।”