তারিন আহমেদ দিবা
“আমার শৈশব গেলো কই?” মাঝরাতে ঘুম ভেঙে হঠাৎ বলে উঠল আয়না বিবি।
পাশে শুয়ে থাকা তার স্বামী মোতালেব মিয়া অসময়ে ঘুম ভেঙে যাওয়ায় বিরক্ত হয়ে বললেন, “এই মাঝরাতে শৈশব খুঁজতে বসলে! মেয়ে মানুষের সব কিছুতেই বাড়াবাড়ি! এতো রাতে শৈশব কোথায় পাবে! দুঃস্বপ্ন পেলে পেতে পারো! এখন ঘুমাও। কাল সকালে খুঁজো।”
আয়না বিবি যেন মোতালেব মিয়ার কথায় পাত্তাই দিলেন না। বিড়বিড় করে বলতে লাগলেন,”কোথায় যে রাখলাম! কিছুতেই মনে পড়ছে না!”
মোতালেব মিয়া আর কথা বাড়ালেন না, কাঁথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়লেন ।
সাথে সাথে আয়না বিবি তাকে ঝাঁকি দিয়ে তুলে বললেন,
“মতি, চলো না মেমোরি লেন যাই!”
মোতালেব মিয়া রেগে কিছু একটা বলতেই যাচ্ছিলেন হঠাৎ আয়না বিবি বললেন, “নাহ্ থাক! তুমি ঘুমাও। কাল সকালে যাবো।”
মোতালেব মিয়া কানে তুলো গুঁজে মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়লেন।
আয়না বিবি শুয়ে এপাশ ওপাশ করতে লাগলেন তারপর কখন যে বিছানা ছেড়ে গেট পেরিয়ে মেমোরি লেনের পথে হাঁটা দিলেন তিনি নিজেও জানেন না। মেমরি লেন পৌঁছাতেই সেখান কার গার্ড আক্কাছ মিয়া তাকে সালাম দিলেন। বললেন, “হঠাৎ এখানে?”
আয়না বিবি বললেন, “আচ্ছা আক্কাছ, তুমি আমার শৈশব দেখেছ?”
আক্কাছ বললেন, “আপা আমি তো আসছি দশ বছর।”
-”ও হ্যা! তুমি তো নতুন। আচ্ছা আমাকে একটু শৈশব খুঁজতে সাহায্য করবে? খুব উপর হবে!”
– “কোনো চিন্তা নেই, আপা। আচ্ছা একটু মনে করে বলেন তো শেষ বার শৈশবের সাথে কবে দেখা হয়েছিল আপনার?”
– “এইতো আমার বয়স তখন পাঁচ হবে। আমি কি জানি খেলছিলাম নুরু চাচার মেয়ে নাজমার সাথে ওদের বাড়ির ড্রয়িং রুমে। খুব সুন্দর বেতের সোফা সেট ছিলো ওদের। তারপর চাচী নাজমাকে ডাক দিলো। নাজমা রান্না ঘরের দিকে দৌড় দিল। এরপর নুরু চাচা আমাকে বললো, কিরে আনু! লজেন্স খাবি? আয় আমার ঘরে অনেক লজেন্স আছে। আমি চলে গেলাম এরপর লজেন্স হাতে দিয়ে উনি আমাকে যেই না কোলে বসালেন ওমনি শৈশবটা কোথায় যে হারিয়ে গেলো। এরপর পাশের বাসার বজলু ভাই , মুদির দোকানের হাবিব মামা আমার শৈশব কে কেটে-ছিঁড়ে বস্তায় ভরে বুড়িগঙ্গায় সেই যে ভাসিয়ে দিলো। তারপর থেকেই তো!”
আক্কাছ কি বলবে বুঝতে পারলো না। গলায় মাছের কাটার মতো গলায় আটকে গেলো।
অতঃপর… নীরবতা নামের এক নদী বয়ে গেলো মেমোরি লেনের তিন নম্বর বাড়ির গেটে…