মহিমা

মার্জিয়া তাবাসসুম

প্রতিদিনের মতো আজও মহিমা ছাদে গিয়ে একমনে আকাশের দিকে তাকিয়ে  নিরবে কাঁদছে। অথচ এই ছাদ, এই গোধূলির আলোমাখা আকাশ তার খুব পছন্দের ছিল। বিকেলের আদরমাখা রোদের ঝলকানি মহিমার খুব ভাল লাগত। তাই সে মন খারাপ হলেই ছাদে এসে বসে থাকত। এই গোধূলিমাখা বিকেলই মহিমার ভালবাসার সাক্ষী হয়ে ছিল। কিন্তু এখন আর মহিমার কিছুই ভাল লাগে না, সব ভালো লাগা থমকে গেছে তার প্রিয় মানুষের অপেক্ষায়।

মহিমাদের বাড়ির পাশের বাড়িতেই ছিল শাওনদের বাড়ি। শাওন ও রোজ বিকেলে আকাশ দেখতে ছাদে যেত। একদিন হঠাৎ মহিমাকে ছাদে দেখে শাওন। সেই থেকে শাওনও রোজ অপেক্ষা করত মহিমার জন্য। মহিমাও শাওনকে রোজ দেখত। এভাব করেই তাদের মধ্যে ভাব হয়ে যায়। তবে এ ভাব ছিল শুধুই ইশারার মাধ্যমে। কেউ কারো সাথে কথা বলত না। শুধু ইশারায় কথা বলত। কারন দুজনেই ছিল বোবা। তবে বোবা হলেও তো তাদের অনূভুতি আছে, ভালবাসা আছে। খুব গভীর ভালবাসা ছিল তাদের মধ্যে। মহিমাকে একদিন দেখতে না পারলে শাওনের মন ব্যাকুল হয়ে  যেত। এরকম ভাবেই চলছিল তাদের ভালবাসা। হঠাৎ একদিন তাদের ভালবাসায় নেমে এলো ঘোর অন্ধকার। শাওন একদিন বিকেলে বাইরে গিয়েছিল একটু কাজে। অবশ্য সে মহিমাকে বলে গিয়েছিল অপেক্ষা করতে।

এই অপেক্ষাই ছিল মহিমার অনন্তকালের অপেক্ষা।

পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী শাওনকে রাস্তা থেকে ধরে নিয়ে যায় এবং তাকে মেরে ফেলে, বাঙ্গালী যুবক হবার দোষে। মহিমা অপেক্ষা করছিল তার  ভালোবাসার মানুষটির জন্য। কিন্তু বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে গেল, শাওন আর ফিরল না। এভাবে করেই  ৫০ বছর পার হয়ে গেল। আজও মহিমা অপেক্ষা করে শাওনের জন্য। মহিমা এখনো জানেনা শাওনের মৃত্যুর খবর। কারন সে যে কিছু শুনতে পায় না, বুঝবে কি করে? সে ভাবে হয়ত শাওন একদিন ফিরে আসবে কোনো এক গোধূলি মাখা বিকেলে। তার এ অপেক্ষা সীমাহীন আকাশের মতই সীমাহীন হয়ে থাকবে আজীবন….